কৃষি বিষয়ক যেকোনো তথ্য পেতে নিচের সাইটগুলো ভিজিট করুন
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। ১৯৬১ সনে কৃষি তথ্য সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ১৯৮০ সনে কৃষি তথ্য সংস্থাকে কৃষি তথ্য সার্ভিস নামকরণ করা হয়। সংস্থাটি জন্মলগ্ন থেকে নিরলসভাবে গণমাধ্যমের সাহায্যে কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি তৃণমূল পর্যন্ত দ্রুত বিস্তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের সদর দপ্তর খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকায় অবস্থিত। মাঠ পর্যায়ে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কৃমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা ও বরিশালসহ মোট এগারোটি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ঠাকুরগাঁও ও কক্সবাজারে দুটি লিয়াজোঁ অফিস রয়েছে।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত আধুনিক লাগসই কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি সহজ সরল ও সাবলীলভাবে অভীষ্ট দলের কাছে বোধগম্য আকারে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রধান লক্ষ্য। প্রিন্টিং মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও আইসিটি’র সাহায্যে এসব তথ্য প্রযুক্তি বিভিন্ন আঙ্গিক ও কৌশলে উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা এবং কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।
তথ্য বিস্তারের মিডিয়া:
কৃষি তথ্য সার্ভিস মূলতঃ প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও আইসিটি মাধ্যমে তথ্য বিস্তার করে থাকে। এসব মাধ্যমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে তুলে ধরা হলো:
ক. প্রিন্ট মিডিয়া:
কৃষি তথ্য সার্ভিসের রয়েছে নিজস্ব প্রকাশনা তথা প্রিন্টিং সামগ্রী। সদর দপ্তরে স্থাপিত প্রেস শাখা থেকে নিয়মিত ও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে দু’ভাবে বিভিন্ন মুদ্রণ সামগ্রী প্রকাশ করা হয়ে থাকে। নিয়মিত প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে- কৃষিকথা, সম্প্রসারণ বার্তা, কৃষি ডাইরি। কৃষিকথা বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী কৃষি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা। বর্তমানে কৃষিকথার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি সমন্বিত খবরভিত্তিক মাসিক বিভাগীয় বুলেটিন ’সম্প্রসারণ বার্তা’ ৪ রঙে প্রকাশ ও বিতরণ করা হয়। প্রতিমাসে ২ হাজার কপি সম্প্রসারণ বার্তা সারা দেশের কৃষি সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি অফিসে বিতরণ করা হয়। কৃষি ডাইরি-বাংলাদেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ডাইরি। সাধারণ ডাইরির সাথে কৃষি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা, ব্যক্তি, সমিতি, সংগঠনের ফোন/ফ্যাক্স নম্বর, ই-মেইল, ওয়েব সাইটসহ প্রয়োজনীয় যোগাযোগের ঠিকানা থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আধুনিক হালনাগাদ কৃষি সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত থাকায় কৃষক, ব্যবসায়ী, উৎপাদক, ছাত্র, শিক্ষকসহ সবার কাজে লাগে।
এছাড়াও বিভিন্ন মুদ্রণ সামগ্রী প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সারা বছরই প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এসবের মধ্যে রয়েছে কৃষি প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন বই, বুকলেট, জার্নাল, প্রতিবেদন, পোস্টার, লিফলেট, ফোল্ডার, ফ্লিপচার্ট, স্টিকার ইত্যাদি। এ ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসে/ প্রয়োজনে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি, ফিচার, ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে থাকে। এতে আপামর পাঠক বিষয়ভিত্তিক তথ্য ও জ্ঞান লাভ করতে পারে।
খ. ইলেকট্রনিক মিডিয়া:
কৃষি তথ্য সার্ভিসের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিনের। কৃষি তথ্য সার্ভিস জন্মলগ্ন থেকে বেতারের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে কৃষি বিষয়ক কার্যক্রমে সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারের ১০টি কেন্দ্র থেকে জাতীয় ও আঞ্চলিক কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে। প্রভাতি এবং সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠানের পরিধি দৈনিক প্রায় ১৪ ঘন্টা। শ্রোতা উপযোগী অনুষ্ঠান বিনির্মাণে কৃষি তথ্য সার্ভিস সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি তথ্য সার্ভিসের উদ্যোগে এবং এফএও’র কারিগরী সহায়তায় বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় একটি কমিউনিটি রেডিও স্থাপিত হয়েছে। কমিউনিটি রুরাল রেডিও বা কৃষি রেডিও-ঋগ ৯৮.৮ নামে সুপরিচিত এই কমিউনিটি রেডিও ‘আমার রেডিও আমার কথা বলে’ চেতনাকে ধারণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সকাল, দুপুর ও সান্ধ্যকালীন মিলিয়ে প্রতিদিন ০৮ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে কৃষি রেডিও থেকে।
এ দপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান সপ্তাহে ৬ দিন সম্প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া জাতীয় ও বিভাগীয় প্রয়োজনে বিষয়ভিত্তিক প্রতিবেদন, ফিচার, সফলকাহিনী, সমস্যা ও সমাধান, টকশো, ডকুড্রামা, টেলপ, বিজ্ঞপ্তি সময়োপযোগী আকারে সম্প্রচার করা হয়। বিটিভি ছাড়া অন্যান্য প্রাইভেট চ্যানেলেও একই কার্যক্রম চাহিদা এবং গুরুত্ব অনুযায়ী সম্প্রচারিত হচ্ছে।
সময়ের প্রয়োজনে মার্চ ২০১৪ থেকে থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রতিদিন সকাল ৭.২৫ মিনিটে প্রচারিত হচ্ছে ‘বাংলার কৃষি’ অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠান সম্প্রচারে প্রযুক্তিগত তথ্য ও সহযোগিতা কৃষি তথ্য সার্ভিস দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সম্মুখ ভবিষ্যৎ এ কার্যক্রম আরো সমৃদ্ধ হয়ে কার্যকরভাবে এগিয়ে যাবে।
কৃষি তথ্য সার্ভিস এ যাবত শতাধিক স্পট, ফিলার, ফিল্মসহ বিভিন্ন কৃষি তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ভিডিও সামগ্রী তৈরি করেছে। দেশের ১০টি অঞ্চলে সিনেমা ভ্যানের মাধ্যমে এসব প্রদর্শন করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিনোদনভিত্তিক এসব ডকুমেন্টারি ডকুফিচার, ডক্যুসং, ডক্যুড্রামা, পট্ গান, স্পট, গান, গম্ভীরাসহ অন্যান্য লোকজ সংস্কৃতি দারুণ জনপ্রিয়তার মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়ে আসছে।
গ. আইসিটি মিডিয়া:
লাগসই কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি সময়মতো কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য আইসিটি বা তথ্য প্রযুক্তি সবচেয়ে কার্যকর একটি মাধ্যম। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মানে কৃষি তথ্য সার্ভিস বিগত পাঁচ বছরে কৃষিক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটিয়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-কৃষি বিষয়ক বাংলাদেশের বৃহত্তম ওয়েবসাইট www.ais.gov.bd প্রতিষ্ঠা। কৃষিবিষয়ক সমসাময়িক বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য, প্রযুক্তি এখান থেকে পাওয়া যায়। তাছাড়া কৃষি বিষয়ে আগ্রহী যেকোন ব্যক্তি এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে প্রশ্ন করে দ্রুততম সময়ে সমাধান পেতে পারেন।
এছাড়া কৃষি তথ্য সার্ভিসই প্রথম আইপিএম/আইসিএম ক্লাবের কৃষক সদস্যদের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি) স্থাপন করে কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের যুগোপযোগী, আধুনিক এবং সহজতর পদ্ধতি ব্যবহারের সূত্রপাত করছে। এসব এআইসিসিতে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার, ইন্টারনেট মডেম, প্রিন্টার, মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী, ক্যামেরা ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি সদস্যদের এ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪৫ টি এআইসিসি দেশব্যাপী স্থাপিত হয়েছে। আরো ১০০টি এআইসিসি স্থাপনের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক ১৫টি ই-বুক তথা মাল্টিমিডিয়া বুক তৈরি করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে সহজবোধ্যভাবে কৃষি তথ্যাদি উপস্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া হাতের স্পর্শের মাধ্যমে তথ্য প্রাপ্তির জন্য ‘কিয়স্ক’ তৈরি করা হয়েছে। অনলাইন কৃষক টেলিভিশনের মাধ্যমে ভিডিও চিত্র প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মোবাইল ফোন আমাদের জীবনযাত্রাকে অনেক সহজতর করে তুলেছে। মোবাইল ফোনকে কৃষি তথ্য বিস্তারের হাতয়িার হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে কৃষি তথ্য সার্ভিস ও প্র্যাকটিক্যাল একশন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে ‘কৃষি কল সেন্টার’। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক যেকোন প্রশ্ন করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সরাসরি সমাধান পাওয়া যাচ্ছে এই কল সেন্টার থেকে। এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়েছে এবং বিটিআরসি থেকে একটি টোল ফ্রি শর্ট কোড নম্বরও বরাদ্দ হয়েছে। খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরুর হবে এবং কৃষকভাইয়েরা এই কল সেন্টার থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কৃষি বিষয়ক সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান নিতে পারবেন। এসব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে কৃষি উন্নয়ন অনেকটুকু ত্বরান্বিত হবে-যা আাগামীতে কৃষিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্যাপন:
জাতীয় কৃষি দিবস, ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ, বিশ্ব খাদ্য দিবস, বিশ্ব বেতার দিবসসহ অন্যান্য কৃষিভিত্তিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসের যাবতীয় প্রচার প্রচারণা কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কৃষি তথ্য সার্ভিসের নেতৃত্বে সম্পাদিত হয়ে থাকে। এসব দিবসে বেতার টেলিভিশন, ছাপানো মাধ্যমসহ অন্যান্য সকল কার্যক্রম সুনিপুণভাবে সম্পন্ন হয় কৃষি তথ্য সার্ভিসের সার্বিক সহায়তায়।
মানব সম্পদ উন্নয়ন:
জ্ঞান দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এ মর্মবাণী ধারণ করে কৃষি তথ্য সার্ভিস মিডিয়াভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত করে থাকে। এ প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশব্যাপী মিডিয়া পার্সোনাল তথা কমিউনিকেটর তৈরি করা। এতে কৃষি তথ্য প্রযুক্তি আরো দ্রুত এবং কার্যকর পদ্ধতিতে কৃষকের দ্বারে পৌঁছে যাবে। কৃষিতে উন্নয়ন যোগাযোগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর কৌশল, ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, ই-গভর্নেন্স, ই-কৃষি, কম্পিউটার এপ্লিকেশনসহ অন্যান্য আবশ্যকীয় শিরোনামে ৩ থেকে ৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করছে। এতে সরকারি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা/কর্মচারী অংশগ্রহণ করে থাকেন। কৃষি তথ্য সার্ভিস এর সদর দপ্তরের যাবতীয় প্রশিক্ষণ আধুনিক সুযোগসুবিধা সম্পন্ন আইসিটি কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আঞ্চলিক পর্যায়ে উপযুক্ত ভেন্যুতে এ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সেমিনার, ওয়াকর্শপ ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে নীতিনির্ধারকমহলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ/মতামত তুলে ধরা হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস